REAZ MORSHED
  • COPY WRITINGS
  • PHOTOGRAPHY
  • কবিতা
  • LOGO & WELCOME TUNE
  • গল্প

ঘেউ ঘেউ  ঘেউ

খুব সকাল বেলা। আমি বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামলাম। দেখলাম এলাকা পাহাড়া দেবার কেউ নাই। শুধু কয়েকটা কুকুর জেগে আছে। দুইটা লাল রঙের আর একটা কালো রঙের। লাল একটার সাস্থ্য বেশ ভালো।বয়সও কম।ভাবলাম এইটাকে ধরে নিয়ে বাসায় পালতে পারলে খারাপ হবে না। ফ্যান ভাত খাবেতো? নাকি রুটি বিস্কুট? ঢাকার কুকুরতো রুটিই খেতে চায় না।না খেলে না খাবে। ওকে আমি বিস্কুটই খাওয়াবো।আর সপ্তাহে একদিন মাংসের ছাটি। ডাম্মাক কসাইকে আগেরদিন বলে রাখলে সে ছাটির ব্যবস্থা করে রাখবে।



এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম এরা আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকররকম চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।এদের চিৎকারে পুরো এলাকা গরম। আমি কী করব বুঝে উঠতে পারতেসি না। দৌড় দিব নাকি বিস্কুট দিব।বিস্কুট দিলে এরা নিশ্চই চুপ করবে। কিন্তু আমার কাছেতো এখন কোন বিস্কুট নাই।আচ্ছা,মুখ দিয়ে চুকচুক করে দেখব? যদি হিতে বিপরীত হয়? নিজের ওপর বিরক্ত লাগতেসে, ক্যান এত সকাল সকাল বের হইলাম।আতংকে ভূলেও গেসি ঠিক কী কারনে বের হইসিলাম।মশার কয়েল কিনতে? মোবাইলে টাকা ভরতে নাকি পেপার কিনতে?

​

হটাৎ লক্ষ করলাম এদের চিৎকারের উৎস আমি না।আমার পেছনে থাকা একটা লোক।আমার প্রানে পানি আসলো। খেয়াল করলাম,লোকটা আমার মত ভিতু না। সে এর মধ্যেই একটা লাঠি জোগাড় করে ফেলসে। সেই লাঠি ম্যাজিকের মত কাজ দিতে শুরু করল। লাঠি দেখে ভয়ে কুকুরগুলি একটু দূরে গিয়ে দাড়ালো।ওরা ওখানে দাড়িয়েই ঘেউঘেউ করতে থাকল।লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আমি তার দিকে এবার তাকিয়ে বিস্তারিত খেয়াল করলাম। তার কাধে ময়লার বস্তা। পরনের সার্ট প্যান্টো অনেক ময়লা। আমি এইবার নিশ্চিত হলাম। আবাসিক এলাকার কুকুর অপরিচিত নোংরা কাউকে দেখলেই চিৎকার করে। এরা বাচ্চা টোকাইকেও ছাড় দেয় না।মোট কথা ময়লা জামা কিংবা উদ্ভট বেশভূষা হইলেই ঘেউঘেউ।কোন ছাড় নাই।



লোকটা চলে যাবার পর সাথে সাথে আমার মনে পড়ে গেল এত সকালে আমার বাসা থেকে বের হবার কারন। অনেকদিন যাবৎ পেপার পড়ি না। ঘুম থেকে উঠেই মনে হল পেপার কেনা উচিৎ। বাস্তব জগৎ থেকে আমি বেশী দূরে চলে যাচ্ছি। আর দূরে থাকা যাবে না। পা চালিয়ে পেপারের দোকানে চলে আসলাম।এখানে পেপারের পাশাপাশি চা সিগারটও পাওয়া যায়। মনে হল বাসি পেটে এক কাপ চা আর সিগারেট খাওয়া যেতে পারে।ফ্যামিলি বাসায় থাকলে এই সুযোগ সচারচর পাওয়া যায় না। আজকে যেহেতু পেয়েছি তাই এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিৎ।আমি একহাতে পেপারটা নিয়ে অন্যহাতে সিগারেট ধরিয়ে টুলে বসে পড়লাম। আনমনে একএক করে পাতা উল্টাতে থাকলাম।মনে হল ঘুরেফিরে সেই একই খবর। সবকিছুর দাম উর্ধ্ব গতি,নায়িকার মোটা পেট, হরতাল,ক্রস ফায়ার,ব্যান্ডশো ইত্যাদি সব হাচুকি ফাচুকি।ভাবলাম পেপারটা ভাজ করে একটা লাল চায়ের অর্ডার দেই। কাগজ ভাজ করতে করতেই একটা খবরে চোখ আটকে গেল।আমি আমার সমস্ত মনযোগে খবরটা পড়তে শুরু করলাম ।কুষ্টিয়ায় সাধু সঙ্গের খবর।সাথে দোতারা হাতে বাউলদের ছবি। একসময় খুব যাওয়ার অভ্যাস ছিল কিন্তু এখন ব্যাস্ত থাকার কারনে যাওয়াতো দূরের কথা, কবে কী হয় তার খবরও রাখতে পারি না। শেষ মনে হয় গিয়েছিলাম বছর সাতেক আগে। তখন সারারাত কাটিয়েছিলাম রাজবাড়ির একদল বাউলের সাথে। কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। আমার খেয়াল ভাঙ্গল কিছু ইংরেজী শুনে।"অল দে আর হিপোক্রেট, এদের ধরে সোজা চুল দাড়ি কেটে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিৎ।উই শুড মেক দেম সিভিল"মনে মনে ভাবলাম কোন হালায়রে। চোখ উঠিয়ে লক্ষ করলাম সার্ট,প্যান্ট,টাই পড়া নিপাট একজন ভদ্রলোক। চোখে চোখ পড়তেই বললেন সরকার যে কেন এদের সম্পর্কে উদাসীন,জানিনা। সারাদিন গাঁজা খাও আর গান কর।হোয়াট দ্যা বুলশিট। এরা কী দেশের কোন কাজে আসে? ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে চৌখিক সমর্থন চাইলেন। এরপর আর সমর্থনের ধার ধারলেন না।এক নাগাড়ে বলে যেতে থাকলেন এরা কেন দেশ ও ধর্মের শত্রু। আমার আর ভাল্লাগলো না।আমি চা সিগারেট শেষ করে উঠে দাড়ালাম। দোকানদারকে টাকা দিতে দিতে আমার কানে বাজতে লাগল ঘেউ ঘেউ ঘেউ।আমি রাস্তায় নেমে পড়লাম।তখনও আমার কানে ভেসে আসতে থাকলো-ঘেউ ঘেউ ঘেউ.............
Powered by Create your own unique website with customizable templates.
  • COPY WRITINGS
  • PHOTOGRAPHY
  • কবিতা
  • LOGO & WELCOME TUNE
  • গল্প